Islamic Role on the Development of International Humanitarian law আই এইচ এল- এর উন্নয়নে ইসলামেরর অবদান
ভুমিকা
ইসলাম আল্লহ প্রদত্ত সম্পুরন জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহর কাছে মনোনীত দীন হচ্ছে ইসলাম। এখানে জীবনের সব বিষয়ের দিকনির্দেশনা আছে। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের কিভাবে বন্ধুতব পূর্ণ সম্পর্ক থাকবে, মনমালিন্য হলে কি করবে তার সম্পুরন বিবরণ আছে। ইসলাম সব সময়ই শান্তি চায়। কিন্তু কখনও কখনও বিরুধহ পক্ষের আচরণ বা অন্যান্য কারনে শান্তি আর টিকে না, বেধে যায় যুদ্ধ । এখানেও রয়েছে তার ব্যাপ্তি ।
আই এইচ এল কী?
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস- ১৮৫৯ সালে সোলফেরিনোর যুদ্ধে (ইতালি এবং ফ্রান্স) সুইস ব্যবসায়ী হেনরি ডুনান্ট আহত সৈনিকদের লক্ষ্য করেন যে তাদের চিকিৎসা তো দূরের কথা, বেসামরিক আহতদের সেবা-সুশ্রুষার কোন চিহ্ন নেই, বরং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আহতরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরেছে।তারপরই তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘এ মেমরি অফ সোলফেরিনো’। । ১৮৬৪ সালের ২২ শে অগাস্ট জেনেভায় কূটনৈতিক সমাবেশে সেই যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা তাঁকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলঃ ১। যুদ্ধকালীন সময়ে একটি স্থায়ী ত্রাণ সংস্থা, এবং ২। একটি সরকারি চুক্তি যা সংস্থাটির নিরপেক্ষতার স্বীকৃতি দেবে এবং যুদ্ধাঞ্চলে সংস্থাটিকে সাহায্য প্রদানের অনুমতি দেবে। প্রথম প্রস্তাবটির কারণে প্রতিষ্ঠা পায় রেডক্রস (মুসলিম বইষব ত্রাণ সংস্থা) আর দ্বিতীয়টি জন্ম দিয়েছিল প্রথম জেনেভা কনভেনশন (এইচ এল এর প্রথম ধাপ)। পরে ১৯০১ হেনরী ডুনান্ট প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। সেদিনই প্রথম জেনেভা কনভেনশন গৃহীত হয়। ১৯০১ সালে এর জন্য প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয় হেনরি ডুনান্টকে।
যুদ্ধ বা শক্তির প্রয়াগ আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। কিন্তু যুদ্ধ যখন লেগেই গেলে তার পরবর্তী কাযক্রম যেমন- বেসামরিক লকদের উপর আক্রমণ নিষিদ্ধ, যুদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা; তাদের উপর অত্যাচার পরিহার; ইত্যাদি নিয়ে আই এইচ এল আলোচনা করে। আই এইচ এল এর পূর্ণরুপ হচ্ছে ইনটারন্যাশনাল হিউমানিটারিয়ান ল (International Hhumanitarian Law সংক্ষেপে IHL, বাংলায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইন)। আই এইচ এল বা মানবিক আইন আন্তর্জাতিক আইনের সেই শাখা যা সশস্ত্র সংঘাতে যারা যুদ্ধে অংগ্রহণ করে নাই তাদের রক্ষা এবং যদ্ধাদের জন্য যুদ্ধের উপায়, পদ্ধতি ও বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রণ করে। ৪ টি জেনেভা কনভেনশন, ৩ টি অতিরিক্ত প্রোটোকল এবং হেগ কনভেনশন মিলে এই আইন।এদের মধ্যে, প্রথম জেনেভা কনভেনশন যুদ্ধের সময় আহত ও অসুস্থ সৈন্যদের রক্ষা সংক্রান্ত,ব দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশন যুদ্ধের সময় সমুদ্রের মধ্যে আহতদের অসুস্থ ও নৌবহরের সামরিক কর্মীদের রক্ষা সংক্রান্ত, তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন যুদ্ধ বন্দীদের সংক্রান্ত, চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন দখলকৃত অঞ্চলের নাগরিকদের রক্ষা সংক্রান্ত । এবং প্রটোকল ১ (১৯৭৭) আন্তর্জাতিক সামরিক সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি রক্ষার্থে গৃহীত হয়, প্রটোকল ২ (১৯৭৭) অ-আন্তর্জাতিক সামরিক সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গকে রক্ষার সাথে সম্পর্কিত, প্রটোকল ৩ (২০০৫) অতিরিক্ত স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীক পরিগ্রহ করা সংক্রান্ত বিষয়ে গৃহীত হয়। আন্যদিকে হেগ কনভেনশন যুদ্ধ এর নিয়ম নিয়ন্ত্রন করে। এই সব নিয়ম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রথা, রীতিনীতি ও ধর্মীয় আইন থেকে নেওয়া হয়েছে।
আই এইচ এল এবং ইসলাম
ইসলামী আইনের উৎস হচ্ছে ১) কুরআন; ২) সুন্নাহ ৩) ইজমা ৪); কিয়াস। এ গূলো থেকে উতসারিত আইন আই এইচ এল এড় ব্যাপক ঊন্নয়ন সাধন করেছে। এমনকি তা ক্রিষ্ট ধর্ম কে ছাড়িয়ে গেছে। আন্যদিকে আই এইচ এল এর উৎস হচ্ছে ৪ টি জেনেভা কনভেনশন, ৩ টি অতিরিক্ত প্রোটোকল এবং হেগ কনভেনশন। নিচে জেনেভা কনভেনশনস এবং অতিরিক্ত প্রোটোকলগুলোর সাথে তুলনা দেখলেই বোঝা যাবে আই এইচ এল ইসলামী আইন দ্বারা কিভাবে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত (আই এইচ এল এর কিছু বিধির সারাংশ দ্বারা
যারা যুদ্ধের বাইরে এবং যারা সশস্ত্র সংঘাতে অংশ নিচ্ছে না, তারা সব পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তোমরাও তাদের সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর আর সীমা লংঘন কর না। আবুল আলিয়া (রহঃ) বলেন যে, মাদীনায় জিহাদের হুকুম এটাই প্রথম অবতীণর্ হয়। এই আয়াতের নিদের্ েশর পরিপ্রেক্ষিতে রাসূললু াহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র ঐ লোকদের সাথে যুদ্ধ করতেন যারা তাঁর সাথে যুদ্ধ করত। যারা তাঁর সাথে যুদ্ধ করতনা তিনিও তাদের সাথে যুদ্ধ করতেন না।
বিজয়ী পক্ষ যুদ্ধ বন্ধীদের সাথে সব ধরনের আচরণের জন্য দায়ী থাকবে এবং তারা সর্বদা মানবিক আচরণের অধিকারী
অতপরঃ হয় আনুকম্পা না হয় মুক্তিপণ, সুরা মুহাম্মাদের এই আয়াত যুদ্ধবন্ধিদের সাথে আচরণের রেফারেন্স দেওয়া হয়। এ সক্রান্ত আর একটি আয়াত হল সুরা দাহরের যেখানে সতক্রমশীলদের জান্নাতের ক্তহা ব্লে তাদের একটি গুন হচ্ছে যে ,”এবং খাদ্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও আভাবগ্রস্থ,ইয়াতীম ও বন্ধিকে আহার্য দান করে।“এছাড়াও বদরের যখন ৭০ জন বন্ধিকে নিয়ে আসা হল তখন সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করে তাদেরকে মাসজিদে এবং সাহাবিদের বাড়িতে আশ্রায় দেওয়া হয় এবং রসুল স বলেন যে তাদের সাথে ভাল আচরণ কর। বুখারির বনরনায় আছে যে বদরের যুদ্ধের পর বন্ধীদের নিয়ে আসা হলে তারা বস্ত্রহীন অবস্থায় ছিল যার মধ্যে আল আব্বাস ছিল। রসুল স তার জন্য একটি জামা খুজছিলেন। পরে দেখা গেল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই র। এর টা তার গায়ে লাগে, তখন তিনি সেটা তাকে পড়তে দিলেন।
সামরিক ও বেসামরিক লোকদের অঙ্গ হানি নিষিদ্ধ
আল্লাহ মানুশকে সতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি উত্তম আকৃতিতে মানুশকে বানিয়েছে।মুহাম্মাদ স যুদ্ধের সময় মানুশের মুখে আক্রমণ করতে নিষেধ করেছে।
যুদ্ধে প্রত্যেক পক্ষ লাশ নষ্ট প্রতিরোধে যথাসম্ভব সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।লাশের কাটাছেড়া নিষিদ্ধ।
লাশের প্রতি সম্মান দেখানর ইসলামের একটি মলিক নিয়ম। আয়েশা র থেকে বর্ণিত রসুল স বলেছেন ম্রত ব্যাক্তির হাড় ভঙ্গা জিবত আবশ্তায় তার হাড় ভাঙ্গার সমান। আন্দলুসিয়ার ফকিহ ইবনে হাজম মত দিয়েছেন যে যদি অপরপক্ষ লাশ না নেয় সেই লাশের দায়িত্ব মুসলিমদের উপর বর্তায় কারন সেটা দাফন না হলে গন্ধ ছড়াবে যা নিষিদ্ধ। এছাড়াও বিভিন্ন হাদিস থেকে পাওয়া যায় যে বদর ওহুদ যুদ্ধে মহিলারা আহতদের চিকিৎসা দিত এবং লাশ খুজে নিয়ে আসত।
এ ছাড়াও যেমন রাত্রে বেলায় আক্রমণ, ফসল ধংসব, গাছপালায় আগুন লাগান, নির্বিচারে সম্পত্তি ধ ংসবম ইত্যাদি ইসলামি আইনে নিষিদ্ধ। মঅট কথা আই এইচ এল এর আনেক গুলি রুল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ইসলামি আইনের সাথে জড়িত।
আই এইচ এল-এর ব্যর্থতা এবং ইসলাম
সমালোচকরা ইসলামে দাসপ্রথা নিয়ে মন্তব্য করে যে, ইসলাম দাস প্রথা নির্মূল করে নাই এবং বন্ধীদের দাস হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু মুহাম্মাদ স এর পূর্বেও দাস প্রথা ছিল পরে তিনিই তা সীমিত করে দিয়েছেন। পূর্বে যুধবন্ধদের কোন অধিকার (Rights) ছিল না, হয় তাদের মেলে ফেলা হত বা দাস বানানো হত। কিন্তু ইসলাম সেখানে শর্তহীন মুক্তি বা মুক্তিপণের বিধান আনে (আল কুরআন ৪৭;৪)। আবু যর গিফারী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এরা তো তোমাদের ভাই, আল্লাহ তোমাদের এদের উপর কর্তৃত্ব দান করেছেন, সুতরাং তোমরা যা খাও তাকে তা খেতে দাও, তোমরা যা পর তাকে তা পরতে দাও এবং তাকে কাজের সাথে অতিরিক্ত চাপিয়ে দিও না, । " অন্য এক বর্ণনায় আছে যে একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমাকে কোন কাজটি আমাকে জাহান্নাম থেকে দূরে এবং জান্নাতের কাছে রাখবে। তিনি বললেন, দাসমুক্তি। বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে যান।
বিবিসির এক রিপোর্টে বলছে যে, দাসত্বের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, মানুষের স্বাধীনতা প্রাকৃতিক (Natural) বিষয় এবং ইসলাম দাসত্ব করার সুযোগসীমিত করে দেয়। সাথে সাথে ক্রীতদাসদের মুক্তির প্রশংসা করে এবং ক্রীতদাসদের কিভাবে আচরণ করবে তা বলে দেয় যেমন- কখন কোন পরিস্থিতিতে দাস বানান যায়, ইসলাম দাসদের ও তাদের সম্পত্তিকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে, বিভিন্ন কাজ্জের মাধ্যমে তাদের মুক্তির উপায় বলে দেয় ইত্যাদি।
অন্যদিকে আইসিআরসির এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গত তিন বছরের মধ্যে শুধু মাত্র রোগীদের বিরুদ্ধে ২৪00 টি হামলা, স্বাস্থ্য কর্মী, ও পরিবহনে ১১ টি হামলার ঘটনা যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলিতে ঘটেছে। যা শুধুমাত্র ১১ টি দেশে তিন বছরে প্রতিদিন দুটির বেশী হামলা হেয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানে, ঘটনাগুলোর ৫০ % বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। এর মানে হল এখানে প্রতি তিন দিনে এক ঘটনা যার অনেক ঘটনা রিপোর্ট করাই হয় নাই।
আর গত বছর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে, সিরিয়ার ৬০% স্বাস্থ্যগত সুবিধা ধ্বংস হয়েছে এবং প্রতি মাসে ২৫,০০০ বেসামিরক মানুষ আহত হয়েছে।
এছারাও ইরাক যুদ্ধ, আফগানস্থানে মার্কিন অগ্রাসন, রুয়ান্ডা গণহত্যা, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, মিয়ানমারে জাতিগত নিধন ইত্যাদি সংঘাতে বিশ্ব যেমন সাক্ষী হয়েছে বেসামরিক লোকদের উপর আক্রমণ সাথে সাথে আই এইচ এল সহ আন্তর্জাতিক আইনের ব্যর্থতা।
উপসংহার
ইসলামিক প্রথা গুলু আই এইচ এল- এর উন্নয়নে এতটাই প্রভাব ফেলেছ যে রেড ক্রস এ বিষয়ে একটি আলাদা বিভাগ খুলেছে (Islam and IHL)। তারা দেখেছে যে বর্তমান যুদ্ধ সমস্যা গুলুর স্পষ্ট সমাধান ই্মলামি আইনেই আছে। এর সমর্থন পাওয়া যায়, আহমদ দাহলান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর প্রফেসর ড. এইচ মুখলাসের বক্তব্যে, যেখানে তিনি রেড ক্রস কে ধন্যবাদ দেন এজন্য যে তারা মানবতাবাদী (যুদ্ধ সংক্রান্ত) নৈতিকতা কর্মসূচির একটি অনুশটান আয়জন করেছে এবং বলেন যে ইসলামী বিশ্বাসের চার মূল নীতি- ইবাদত, আকিদা, আখলাক, এবং পার্থিব বিষয়গুলির উপর নিয়ম (মুমল্লাহ দুনিয়াওয়াই) এর মধ্যে একটি নৈতিকতা (আখলাক) অন্যতম। (আখলাককে আই এইচ এল -এর সাথে রিলেট করেছে) । তিনি আরো বলেন, মুহম্মদদীয়া (ইন্দোনেশিয়ার প্রধান ইসলামী বেসরকারী সংস্থাগুলোর একটি) "বিশ্বজনীন মানবিক নীতি ও মানবতার মূল্যবোধকে সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ", বিশেষত সংগঠনের দুর্যোগ ত্রাণ বাহিনীর কাজের মাধ্যমে।